সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকায় অভেধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্টোন ক্রাশার মিল। এসব স্টোন ক্রাশার মিলের আড়ালে মজুদ করা হয় সাদাপাথর-জাফলং এলাকা থেকে লুট হওয়া পাথর। ফলে ধোপাগুল যেনো হয়ে উঠেছে লুট হওয়া পাথরের ডিপো।
শনিবার ধোপাগুল এলাকার স্টোন ক্রাশার মিল ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে টাস্কফোর্স।
দুপুরে ধোপাগুল এলাকার বিভিন্ন ক্রাশার মিল ও এলাকার জনপদে অভিযান চালিয়ে এসব পাথর উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত পাথরগুলো সাদাপাথর পর্যটন স্পট ও আশপাশের এলাকা থেকে সম্প্রতি লুট করা হয়েছিলো বলে জানা গেছে।
সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াতের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ধোপাগুল এলাকায় অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।
তিনি জানান, ধোপাগুলের মহালধিক গ্রামে বসতবাড়ির আশেপাশে ও ধোপাগুল এলাকার ক্রশার মিলে বালুমাটি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় পাথরের সন্ধান মেলে।
পাথরগুলো পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। পাথর লুটপাট বন্ধে অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযানে, পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকতারাও ছিলেন।
একইদিনে গোয়াইনঘাটের ফতেপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি এলাকা থেকে ২৫০০ ঘনফুট সাদা পাথর জব্দ করা হয়। শনিবার গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
এর আগে, গেলো সপ্তাহে টানা কয়েকদিন প্রকাশ্যে পাথর লুটপাটের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর, ১৩ আগস্ট থেকে লুট ঠেকাতে ও পাথর উদ্ধারে কঠোর অবস্থানে নামে প্রশাসন। গত দুই দিনে এক লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় প্রায় দুই হাজার অজ্ঞাত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর। মামলার পর, শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ জনকে।
এদিকে, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।
যদিও, লুট হওয়া পাথরের কোনো পরিসংখ্যান এখনো জানায়নি প্রশাসন।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে জড়িত ছিলেন। ধলাই নদীর উৎসমুখে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ পাথর দিনের বেলা প্রকাশ্যে নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হয়। শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়েছে, এমনকি নদীতীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপির ১৬ জন নেতার নেৃত্বত্বে সাদা পাথর লুট হয়েছে। এসাথে আওয়ামী লীগেরও একাধিক নেতা জড়িত রয়েছেন।। ইতোমধ্যে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে লুটে জড়িতদের তালিকা আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিটটি করেন সরওয়ার আহাদ এবং শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.