সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যার ঘটনায় আরো দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার (সাসপেন্ড) করা হয়েছে।

এ দুই পুলিশ সদস্য হলেন- নগরীর কোতোয়ালী থানায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র এবং এসআই আব্দুল বাতেন।

তন্মধ্যে রায়হান হত্যার মামলাটি প্রথমে এসআই আব্দুল বাতেন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে এ দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে গাফিলতি, এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়ার পলায়ন সবমিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সৌমেন মৈত্রকে রংপুর জেলা পুলিশে সংযুক্ত করা হয়েছে। আব্দুল বাতেন আপাতত এসএমপিতেই আছেন। 

এ নিয়ে রায়হান হত্যার ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও পাঁচজনকে প্রত্যাহার করা হলো। এছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে চার পুলিশ সদস্যকে।

গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে ধরে নেওয়া হয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। ১১ অক্টোবরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মারা যান রায়হান।

পরে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে আহত হন রায়হান, পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। বলা হয়, ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা গেছেন রায়হান। রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালী থানায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা করেন।

নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটি অনুসন্ধানে ফাঁড়িতে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

১৩ অক্টোবর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। তাকে গ্রেফতারে আন্দোলন দানা বাঁধে সিলেটে। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা জানায়, তিনি ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। পরদিন আদালতে হাজির করে আকবরের সাত দিনের রিমান্ড চায় পিবিআই। আদালত সাত দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর আকবরকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি, মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইও নতুন করে রিমান্ডের আবেদন করেনি। ফলে আদালত আকবরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

গত ১৯ নভেম্বর রাতে ডোনা সীমান্ত এলাকার একটি পাহাড়চূড়া থেকে আকবরের দুটি মুঠোফোন, তিনটি সিমকার্ড, শার্ট-প্যান্ট  ও গেঞ্জি, ২০ টাকার একটি নোট, তার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং এক মহিলার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি উদ্ধার করা হয়। এগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই।

রায়হান হত্যা মামলায় এখন অবধি এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কনস্টেবল টিুটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদকে দুই দফায় আট দিন করে এবং এএসআই আশেক এলাহীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাদেরকে প্রেরণ করা হয় কারাগারে।

এদিকে, রায়হানকে ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে গত ১৫ নভেম্বর প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখায় পিবিআই। পরে তাকে নেওয়া হয় তিন দিনের রিমান্ডে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *