প্রায় পাঁচ বছর আগে কেরানীগঞ্জের যুবক মো. ফয়সল আহমদ (৩৫) ছেড়েছিলেন নিজের ঘর। ফেলে আসেন মা-স্ত্রীকে। দিনের পর দিন ভবঘুরের মতো এখানে-ওখানে ঘুরে লাশ হয়ে পড়েছিলেন সিলেটের সুরমা নদীতে।

মৃত্যুর পর মা-স্ত্রীকে দেওয়া হয় খবর। কিন্তু এতদিনে সুরমা-বুড়িগঙ্গায় গড়িয়েছে অনেক জল। স্ত্রী চলে গেছেন স্বামী ফয়সলের ভিটে ছেড়ে। সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহেও হয়তো পড়েছে কিছুটা ভাটা। তাই তো মৃত্যুর পর লাশ নিতে আগ্রহী হলেন না মা কিংবা স্ত্রী। অবশেষে কেরানীগঞ্জের ওই যুবকের লাশের দাফন হলো সিলেট মহানগরের মানিকপীর টিলায়।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মহাগরের শেখঘাট এলাকার সুরমা নদী থেকে মো. ফয়সল আহমদ নামের ওই  যুবকের লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানাপুলিশ। এর আগে সকাল ৯টার দিকে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ কল দিয়ে ওখানে লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। 

লাশের পরনের প্যান্টের পকেটে পাওয়া যায় একটি জাতীয় পরিচয়পত্র। যার নাম্বার ২৬১৩৮৯৪২৮৩৬১০। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে মৃত যুবকের নাম ফয়সল আহমদ বলে জানা যায়। জানা যায়, তিনি ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার কুশিয়ারবাগ এলাকার আব্দুল মোতলিব ও আখি বেগমের ছেলে। 

এনআইডি কার্ডের সাথে একটি চিরকুটও পাওয়া যায়। সেখানে মা আখি বেগমের মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রেখেছিলেন ফয়ছল। 

লাশ উদ্ধারের পর পিবিআই ও সিআইডি’র প্রচেষ্টায় লাশটি ফয়সল আহমদের বলেই শনাক্ত হয়। পরে মৃতদেহের সঙ্গে থাকা (আখি বেগমের) মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিয়ে বিস্তারিত জানায় পুলিশ এবং লাশ নিতে অনুরোধ করে। কিন্তু আখি বেগম ছেলের লাশ নিতে অসম্মতি জানান। ফয়ছলের মায়ের কাছ থেকেতার স্ত্রীর ফোন নাম্বার নিয়ে  যোগাযোগ করা হলে তিনিও লাশ নিতে অসম্মতি জানান পুলিশকে।

মৃত ফয়সল আহমদের মায়ের বরাত দিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার এস.আই মো. আজিজুল হক মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সিলেটভিউ-কে বলেন- এটি কোনো অস্বাভাবিক বা রহস্যজনক মৃত্যু নয়। লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। 

তিনি আরও বলেন- প্রায় ৫ বছর আগে ওই যুবক বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আর বাড়ি ফিরেননি। তার স্ত্রীও ছিলেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভবঘুরের মতো এখানে-ওখানে থাকতেন। মা-স্ত্রীর খবর নিতেন না। এক পর্যায়ে স্ত্রী তার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। লাশ নেওয়ার  জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কেউই লাশ নিতে রাজি হননি। তাই পুলিশের উদ্যোগে সিলেটের মানিকপীর টিলায় ওই লাশ দাফন করা হয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *