জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ৩২২ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ১৭৬ রান করেন লিটন। ১২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুতর্জার বিদায়ী ম্যাচ। তামিম ইকবাল-লিটন দাসের মধ্যে কি সে জন্যই এত তাড়না দেখা গেল! এ তাড়না ‘উপহার’ দেওয়ার। অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে নতুন ইতিহাস লেখার। ঘটল ঠিক তা–ই। ভুলের পর ভুলে দিশাহীন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং করেছেন দুই ওপেনার। বৃষ্টিবিঘ্নিত ৪৩ ওভারের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বোলাররা যে একটা উইকেটের জন্য হাপিত্যেশ করেছেন! এর চেয়েও দৃষ্টিনন্দন ছিল লিটনের ব্যাটিং।

উইলোকে তুলি বানিয়ে শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে। কাট, কভার ড্রাইভ, ফ্লিক, পিকআপ শট—সবকিছুতেই ছিল চোখের সৌন্দর্য। একসময় মনে হচ্ছিল ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ বোধ হয় হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু ৪১তম ওভারে কার্ল মুম্বাকে স্ট্রেট দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন। তার আগে ১৪৩ বলে খেলেছেন ১৭৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস (১৬ চার ও ৮ ছক্কায়)। অন্য প্রান্তে তামিমও ছিলেন বেশ মারকুটে মেজাজে। ১০৯ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৩২২ রান তুলে ইনিংস শেষ করেছে বাংলাদেশ।

আগের ম্যাচেই ১৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। সেটি ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ‘ছিল’ বলতে হচ্ছে লিটনের জন্য। কেননা, পরের ম্যাচেই মানে আজ তামিমের রেকর্ডটা নতুন করে লিখিয়েছেন লিটন। শুধু কি তা–ই! ২৯২ রানে ভেঙেছে দুজনের ওপেনিং জুটি। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর বিশ্বে ওপেনিং জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ড্রেসিং রুম থেকে দুই সতীর্থের ব্যাটিং নিশ্চয়ই দারুণ উপভোগ করেছেন মাশরাফি? অধিনায়ক হিসেবে তাঁর শেষ ম্যাচে এমন ‘উপহার’ নিশ্চয়ই মাশরাফিকেও ছুঁয়ে গেছে।

বাংলাদেশের ইনিংসকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়—বৃষ্টির আগে ও পরে। বৃষ্টির আগে ৩৩.২ ওভার পর্যন্ত রান ছিল বিনা উইকেটে ১৮২। অর্থাৎ ওভারপ্রতি গড়ে ৬-এর নিচে। বৃষ্টিতে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল খেলা। ম্যাচের দৈর্ঘ্য নামিয়ে আনা হয় ৪৩ ওভারে। প্রায় ১০ ওভারের মতো ইনিংস বাকি থাকায় ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তুলেছেন দুই ওপেনার।

বৃষ্টির আগে ১১৬ বলে ১০২ রান করেছিলেন লিটন। বৃষ্টি থামলে পুনরায় খেলা শুরুর পর তিনি খেলেছেন ২৭ বল—এর মধ্যে তুলেছেন ৭৪! ৮৪ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকা তামিম পুনরায় খেলা শুরুর পর ২৫ বলে তুলেছেন ৪৯। সব মিলিয়ে ৮ ছক্কা ও ১৬টি চার মারেন লিটন। তামিমের ইনিংসে ছিল ৬ ছক্কা ও ৭টি চারের মার। লিটন আউট হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ (৩) ও অভিষিক্ত আফিফ হোসেনের (৭) উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস মোট ছয় বোলার ব্যবহার করেও তামিম-লিটনকে থামাতে পারেননি। লিটনের উইকেটটি ইনিংসের শুরুর দিকেই পেতে পারতেন উইলিয়ামস। লিটন ৫৪ রানে অপরাজিত থাকতে তাঁকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন উইলিয়ামস। আম্পায়ার সাড়া দেননি। উইলিয়ামসও রিভিউ নেননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ওটা আউট ছিল। এ ছাড়া লিটন ও তামিমের ক্যাচও ছেড়েছেন জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা।

রেকর্ড গড়ার যাওয়ার পর সর্বপ্রথম অভিনন্দনটা তামিমের কাছ থেকেই পেয়েছেন লিটন। ড্রেসিং রুম থেকেও ভেসে এসেছে করতালির আওয়াজ। মাশরাফির নেতৃত্ব ছাড়ার দিনে এমন ব্যাটিংই তো ভীষণ কাঙ্ক্ষিত ছিল!

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *