সামান্য বৃষ্টিতেই বিয়ানীবাজারের পাকা সড়কগুলো যেন কাদামাটির সড়কে পরিণত য়ে। বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণে ভিটে ভরাটের জন্য মাটি পরিবহনে এসব রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। আর ব্যবহৃত গাড়ি থেকে এসব সড়কে মাটি পড়ে স্তূপ জমে যায়। যা সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় পরিণত হচ্ছে। এতে পিচ্ছিল সড়কে যখন–তখন উল্টে যাচ্ছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিয়ানীবাজার উপজেলার নালবহর-পিরেরচক সড়ক, শেওলা-চারাবই সড়ক, বিয়ানীবাজার-চারখাই সড়ক, বারইগ্রাম-গজারাই সড়কসহ আরো অন্তত: ৫টি সড়কে এই নাজুক অবস্থা বিরাজমান। সড়ক দিয়ে ব্যবহৃত পরিবহণ থেকে মাটি বৃষ্টির কারনে কাদায় পরিণত হওয়ায় উপজেলার অন্তত: ৬টি ইউনিয়নের নাগরিককে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটার মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাটার মালিকেরা জনদুর্ভোগকে পাত্তা না দিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ইটভাটার সমানে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা পানিতে ভিজে পিচ্ছিলে পরিণত হয়েছে। এতে যানগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।
একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, ’ইটভাটার সামনের সড়কগুলো বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ।’
ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুমি আক্তার বলেন, ‘বৃষ্টি এলেই আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শুনেছি ভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। অথচ সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।’
আকমল মিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্য চলে আসছে। কিছুদিন আগেও বেশ কয়েকটি ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যান উল্টে গিয়েছিল। এতে চালকেরা আহত হয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেলোওয়ার হোসেন বলেন, পিচ্ছিল সড়কে যখন–তখন যান উল্টে যাচ্ছে। তবে এত কিছুর পরও প্রশাসন কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। এতে সহজে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন ভাটা ব্যবসায়ী ও মাটি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটার এক মালিক বলেন, ‘ভোরের বৃষ্টিতে ইটভাটায় কাঁদা জমে যায়। সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। আমি নিজ উদ্যোগে আমার নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে রাস্তায় কাঁদা অপসারণ করে বালু দিয়েছি।’
সবাই এমন কাজ করছেন কিনা–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে বিভিন্ন রাস্তা এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া জনসাধারণের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় সতর্ক হয়ে চলার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমরা ইটভাটার মালিকদের অনেকবার সতর্ক করেছি। কোনো কোনো মাটি ব্যবসায়ীকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছ। তবে এই সমস্যা যেন না ঘটে সে জন্য আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।