এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতর কী আছে, একটা সময় কেউ তা জানত না। এমনকি সরকারি ম্যাপ কিংবা গুগল আর্থেও এর ভেতরকার কোনো ছবি ছিল না। শুধু পুরোনো গ্রুম লেকের একটি ছবি ছিল। কিন্তু পরে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হয়, বিশেষ করে স্যাটেলাইটের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু ছবি প্রকাশ পায়।১৯৬০ দশকে মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইট করোনা বেশ কিছু ছবি তোলে সেখানকার। সেগুলো সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্তও করা হয়। কিন্তু দ্রুতই আবার সব নথি থেকে মুছে ফেলা হয়। তবে কিছুটা যে জানা যায় এর ভেতরের খবর, তা ওই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়নের কল্যাণেই।স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই রুশ গোয়েন্দা স্যাটেলাইট আইকোনোস এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতরের কিছু ছবি তোলে। সেগুলোর সূত্র ধরেই জানা যায়, এর ভেতরে সাতটি রানওয়ে আছে, সেগুলোর দৈর্ঘ্যও মাপা সম্ভব হয়।
সবচেয়ে বড়টার দৈর্ঘ্য ২৩ হাজার ৩০০ ফুট। একটি ছবিতে দেখা যায়, চারটি সল্ট লেকের মাঝখানে বেশ কয়েকটি বোয়িং ৭৩৭ বিমান দাঁড়িয়ে আছে।এমনকি বেশ কিছু এফ-১৬ বিমান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রানওয়েতে। ছিল বেশ কিছু কালো রঙের হেলিকপ্টার।
একটি ছবিতে ধরা পড়ে বিশাল বিশাল গুদাম, বিমান চলাচলের জন্য নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার। পাশেই আবাসিক এলাকা, এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কর্মী, কর্মকর্তা ও গবেষকেরা নিশ্চয়ই সেখানে থাকেন। সেই ছবিতে ফায়ার স্টেশন, পানির ট্যাংক এমনকি বেসবল আর টেনিস কোর্টের সন্ধানও মেলে।
একটি বিশাল হ্যাঙ্গারের সন্ধান মেলে। সাধারণ বিমানঘাঁটিগুলোতেও এমন হ্যাঙ্গার দেখা যায়। অত্যাধুনিক বিমান তৈরির সরঞ্জাম এসব হ্যাঙ্গারের ভেতরে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয় বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। উচ্চতাপ আর বৈরী আবহাওয়া থেকে ভেতরের জিনিসগুলোকে রক্ষা করে এই হ্যাঙার। পাহাড়ের চূড়াগুলোতে বসানো আছে বহু রাডারের সমন্বয়ে একটি রাডার নেটওয়ার্ক। আকাশে নজরদারি চালানোর জন্য নিশ্চয়ই।
এই যে এত এত গুজব এরিয়া ফিফটি ওয়ানকে নিয়ে, এর সত্যতা কতটুকু? এটা সত্যি, এর ভেতর গোপন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। গোপন কারণ, বেশির ভাগ গবেষণাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার আধুনিক সব অস্ত্র, যুদ্ধবিমান আর নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রক্রিয়া চলে এর ভেতর। এলিয়েন নিয়ে গবেষণাও হয়তো চলতে পারে। কিন্তু এর জন্য এত গোপনীয়তার কোনো দরকার ছিল না। ভিনগ্রহী খোঁজা ও অত্যাধুনিক সুপারক্রাফট তৈরির জন্য নাসার চেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়টি নেই। আর সম্ভাব্য এলিয়েনের আক্রমণ প্রতিহত করতে হলে গোটা বিশ্বের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এলিয়েনদের মৃতদেহ নিয়ে গবেষণা বা এলিয়েনদের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করা, উড়ন্ত সসার বা ইউএফও বিধ্বস্ত হওয়া, এগুলো গুজব ছাড়া কিছুই নয়। এ যুগে চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান বা ইউরোপের হাতেও এতসব উন্নত প্রযুক্তি আছে, সেগুলো ফাঁকি দিয়ে এলিয়েনরা শুধু মার্কিনদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, এটা শুধু কল্পবিজ্ঞানেই সম্ভব।
বব লেজারের বয়ানকেও আমল দেওয়ারও কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র সরকারই তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সেটা সত্যি হওয়ার সম্ভবনা আছে। অন্যদিকে রাশিয়ান জনগণ যা-ই ভাবুক, তাঁদের নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এরিয়া ফিফটি ওয়ানের গুজবটা আসলে মার্কিনরা ইচ্ছা করে ছড়িয়েছে। কারণ, মানুষের চোখ অন্যদিকে ঘোরানো। গুজবের আড়ালে তলে তলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বীকে শায়েস্তা করার প্রযুক্তিই উদ্ভাবন করছে। রুশদের এই দাবিটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। আরেকটি কথা ষড়যন্ত্রের মতো মনে হতে পারে, তবু বলা ভালো, এমনও হতে পারে বব লেজারকে দিয়ে গল্পটা হয়তো সিআইএ ছড়িয়েছে, যাতে এলিয়েনের গুজবটা আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
চলবে…
সূত্র: স্পেস ডট কম
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.