পবিত্র রমজান মাস আসে আত্মশুদ্ধির পথ দেখাতে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই মাসটিকে নামাজ-রোজা ও জাকাত আদায়ের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। তাই মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে এই মাস ঘিরে আবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের দামে ছাড় দেওয়া হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এই মাসে ছাড়মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে।সুপারমার্কেট, চেইনশপ থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানেও চলে মূল্য ছাড়ের প্রতিযোগিতা।
উপসাগরীয় মুসলিম দেশ কাতার। রমজান এলেই প্রতিবছর দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। যাতে এসব পণ্যের দাম সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
কাতারভিত্তিক দ্য পেনিনসুলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর রমজান উপলক্ষে এক হাজারের বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কাতারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এই পণ্যগুলো বিশেষ মূল্যছাড়ে বিক্রি চলবে রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত। ২০২৪ সালে ৯০০-এর বেশি পণ্যের দাম কমিয়েছিল দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে কমানো হয় আট শতাধিক পণ্যের দাম।
বড় খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বরকতময় মাসে কম মূল্যে খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্য পরিবারের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। এই কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়।
যেসব পণ্যের দাম কমানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, নুডলস, দই ও দুগ্ধজাত পণ্য, সিরিয়াল ও কর্নফ্লেক্স, গুঁড়া দুধ ও কনডেন্সড মিল্ক, রান্নার তেল, মাখন, পনির, জুস, চিনি, কফি, লবণ, খেজুর, বোতলজাত পানি, টিস্যু পেপার, ডিটারজেন্ট পাউডার, লেবু, হিমায়িত শাকসবজি, মুরগি, ডিম, মাংস, টমেটোর পেস্ট, চা, ঘি, খামির, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যপণ্য, আবর্জনা ব্যাগসহ আরো অনেক কিছু। দেশটিতে মূল্যছাড়ের পাশাপাশি অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফ্রিতেও খাবার বিতরণ করে।
কাতারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় ভোক্তাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কেনাকাটা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বিক্রেতারা ছাড়মূল্যে পণ্য দিচ্ছে কি না তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ভোক্তারা এ ক্ষেত্রে নিয়মের লঙ্ঘন পেলে সেসব অভিযোগ যেন মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল চ্যানেলে জানায়।
খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি উদ্যোগের ফলে এবারের রমজানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ৬৪৪টি বৃহৎ সুপারমার্কেট ১০ হাজার পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে। এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে আরো জানানো হয়, দেশটির অন্যতমবৃহৎ সুপারশপ লুলু হাইপারমার্কেট তাদের সাড়ে পাঁচ হাজার পণ্যে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই প্রতিষ্ঠানটির ৬০০ শাখা রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ভোক্তা রক্ষা ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক পরিচালক সুলতান দারবিশ বলেন, ‘আরো কিছু প্রতিষ্ঠানও তাদের পাঁচ হাজার পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। এই ছাড়ের মধ্যে ফল, সবজিসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য রয়েছে।’ তিনি আরো জানান, রমজান মাসজুড়ে সরকারি কর্মকর্তারা বাজার তদারকি করবেন, যাতে কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়াতে না পারেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরবেও রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ছাড় শুরু হয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের এক ঘোষণায় জানিয়েছে, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ছাড়কৃত মূল্যে পণ্য বিক্রি ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
এই ছাড় স্টোরগুলোর পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটায়ও মিলবে। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। এর মধ্যে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ক্যারিফোর রমজানের অত্যাবশ্যকীয় ২০০-এর অধিক খাদ্যপণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভোজ্য তেল, ওটস, পাস্তা, কফি ইত্যাদি।
জেদ্দার বাসিন্দা রাওয়ান হাসান বলেন, ‘এই মাসে বেশ ভালো ছাড় পাওয়ায় আমি রমজানের জন্য এবং পুরো বছরের জন্য খেজুর কিনে রাখি। এগুলো সংরক্ষণ করে আমি পুরো বছরেই খাই। আমার প্রিয় খেজুর হচ্ছে আজওয়া এবং সুক্কারি।’ উম্মে আয়শা বলেন, ‘এ মাসে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। আমার পছন্দের পানীয় আমি এ মাসেই কিনে রাখি এবং পুরো বছরে খাই। আমি ‘টাংগ’ অনেক পছন্দ করি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.