গত ৬দিন ধরে লাপাত্তা তামান্না আক্তার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় তার নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করে পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করা হলেও পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়ার পর বেরিয়ে এলো অদ্ভুত এক প্রেম কাহিনী।
তামান্না আক্তার নিখোঁজ নয়, প্রবাসী প্রেমিকের পাল্লায় পড়ে পালিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকা থেকে তামান্না উদ্ধার হওয়ার পর পরিবারে প্রশান্তির পরশ লাগলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসা প্রেমকাহিনীতে যেন যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে পরিবারের সদস্যদের উপর।
জানা গেছে, জকিগঞ্জের আটগ্রামের মরইরতল গ্রামের ওমান প্রবাসী শফিকুর রহমানের স্ত্রী তামান্না আক্তার। ২০১৬ সালে শফিক ও তামান্নার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর শফিক স্ত্রী তামান্না আক্তারকে নিজ বাড়িতে রেখে ওমানে চলে যান। পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বিদেশ থেকে স্বামী শফিকুর রহমান পরিবার ও স্ত্রীকে আলাদা করে টাকা পাঠাতেন। উল্লেখ্য, তাদের কোন সন্তান নেই
প্রায় তিন বছর আগে ইমুতে ভূলবশত একটি নম্বর থেকে কল আসে। কথা হয়, যোগাযোগ হয় একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয় ভূল নম্বর থেকে আসা কলার জকিগঞ্জেরই কামালপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী আসাদ উদ্দিনের সাথে। বিষয়টি কেউ জানতো না। স্বামী কিংবা তার পরিবারের লোকজনেরও এ সম্পর্কে ছিলো না অবগতি।
উল্লেখ্য, দুবাইতে থাকা প্রবাসি প্রেমিক আসাদ উদ্দিনের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও কখনো সশরীরে দেখা হয়নি দুজনের।
এদিকে, তামান্না আক্তারের বাড়ি জকিগঞ্জে হলেও তিনি গোলাপগঞ্জ পৌরসভার চৌমুহনী এলাকার একটি ফার্মেসিতে এসে ডাক্তার দেখাতেন। ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজানকে নিয়ে গত রোববার দুপুরে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীতে আসেন তামান্না আক্তার। ফার্মেসির সামনে বোন তামান্নাকে রেখে পানি আনতে যান মিজান। একটু পর ফিরে এসে দেখেন তার বোন নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। আশেপাশে খুঁজেও বোনকে পাননি। বিষয়টি তিনি তৎক্ষণাৎ জানান পরিবারকে। পরে সোমবার গোলাপগঞ্জ থানায় গিয়ে বোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছিলো। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের পাশাপাশি জকিগঞ্জ থানা পুলিশও বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল।
শুক্রবার বিকেলে দুবাই প্রবাসী প্রেমিক আসাদের দুই স্বজনকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে পিতার বাড়ি মানিকপুরের মোহাম্মদপুরে যাচ্ছিলেন তামান্না। এ সময় জকিগঞ্জ থানা পুলিশ রতনগঞ্জের নিকটবর্তী এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। নিয়ে যাওয়া হয় জকিগঞ্জ থানায়।
এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামান্না জানান, ‘প্রায় ৩ বছর আগে দুবাইয়ে থাকা আসাদের সঙ্গে ইমুতে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠা। আসাদ সব সময় তাকে ফোন দিতো। তারা ফোনে কথা বলতো। আসাদও বিবাহিত। তবে বাড়িতে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে তার বনিবনা নেই। এ কারণে সে ওই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে। এরপর আমাকে বিয়ে করবে।’ তামান্না জানান, ‘পূর্বের কথামতো ঘটনার দিন আমি যখন ফার্মেসির সামনে যাই তখন আসাদের স্বজনরা গাড়ি নিয়ে আসেন ওখানে। ভাই মিজান পানি আনতে গেলে ওদের সঙ্গে গাড়িতে করে চলে যাই।’ নিখোঁজের ৬ দিন গোলাপগঞ্জের কালিজুড়ি গ্রামে আসাদের দুলাভাই শাহাবুদ্দিনের বাড়িতে ছিলেন তামান্না। এরপর নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে পুলিশ তাকে আটক করেছে।
এদিকে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রবাসী বধূ তামান্নাকে উদ্ধারের সময় সিএনজি অটোরিকশা থেকে দুবাই প্রবাসী আসাদের স্বজন সুহেল আহমদ ও আব্দুল হককে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, আসাদের পরামর্শ মোতাবেক তারা তামান্নাকে কালিজুড়ি নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানে রাখার পর তাকে পিতার বাড়ি ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছিলো। নিখোঁজের ৬ দিন তামান্না কালিজুড়িতে আসাদের বোনের বাড়িতে ছিল বলে জানায়।
এদিকে জকিগঞ্জে উদ্ধার হলেও তামান্না নিখোঁজের জিডি দায়ের করা হয়েছিলো গোলাপগঞ্জ থানায়। এ কারণে গতকাল শনিবার বিকালে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ আটক দুইজন সহ তামান্নাকে গোলাপগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে। জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল গোলাপগঞ্জ। জিডি করা হয়েছিলো ওই থানায়। এ কারণে উদ্ধারকৃত তামান্না সহ দুইজনকে ওই থানায় পাঠানো হয়েছে।