ঘুম থেকে উঠে সকাল বেলা বিস্কুট হাতে করে নিয়ে মসজিদে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে পানি খেতাম। মসজিদের হুজুর খুব আদর করতেন । যখন তিনি আমাদের কোরআন তেলাওয়াত করে শুনাতেন তখন আমরা সবাই তার পড়া ফলো করতাম। পড়ে তিনি আমাদের পড়াশুনতেন । ভুল হলে পুনরায় বুঝিয়ে দিতেন। এভাবে নিজের ছোট বেলার মক্তবে পড়ার স্মৃতি মনে পড়ে।

আগে মক্তবে ভোর বেলা থেকে পড়া শুরু হতো। মসজিদের বাইরে থেকে শিশুদের মুখে আরবি পড়াগুলো শুনে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু এখন আর তা শুনা যায় না। সকাল বেলা মক্তবে না গিয়ে শিশুরা স্কুলে চলে যায়।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে এখন আর আগের মতো করে মক্তবে শিশুরা পড়তে খুব একটা দেখা যায় না। ফলে জীবনের প্রথম পর্যায় যে নৈতিক শিক্ষা বা নুরানি শিক্ষা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।

মক্তব। মক্তব আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ পাঠশালা বা বিদ্যালয়। ছোট ভাইবোন, ছেলে-মেয়ের কোরআন শেখার এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক মৌল জ্ঞানার্জনের উত্তম শিক্ষাকেন্দ্র হলো এ কোরআনি মক্তব। এখান থেকেই শিশুরা কোরআনের তেলাওয়াত শেখার পাশাপাশি নামাজ-রোজার নিয়ম-কানুন, জরুরি মাসআলা-মাসায়িল, দোয়া-কালাম ইত্যাদি শিখতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আজ তা হারিয়ে যেতে চলেছে।

মুসলামনদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন। কোরআন আমাদের জীবন বিধানও বটে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারাজীবন কীভাবে কাটাতে হবে এর যাবতীয় বিষয় রয়েছে কোরআনে। এগুলো কোরআনের তর্জমা ও তাফসির পড়লে জানতে পারব। কোরআন এমন গুরুত্বপূর্ণ কিতাব, এর অর্থ না বুঝে পড়লেও প্রতি হরফের বিনিময়ে দশটি করে নেকি পাওয়া যায়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত হলো কোরআন তেলাওয়াত করা।’

তাছাড়া এর বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ছাড়া নামাজ হয় না। এমন গুরুত্বপূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত শেখার জন্য প্রয়োজন সকালবেলার মক্তব।

কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতার বড় বড় অট্রালিকার মধ্যে যেনও আটকে গেছে সব কিছু

সচেতন মহলের দাবি-কোথাও কোথাও মক্তবগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও যা-ও চালু আছে, সেগুলোতেও আগের মতো জৌলুস নেই। শিশুদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নামেমাত্র চলছে সেগুলো। এভাবে চলতে থাকলে ইসলামী বুনিয়াদি শিক্ষার এ অবারিত ও ঐতিহ্যগত প্রতিষ্ঠান চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

আর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন দেশে প্রায় প্রতিটি স্থানে সকাল বেলা যে প্রাইভেট স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন রয়েছে সেগুলোর কারণে শিশুদের মক্তবে উপস্থিতি নেই । এতে করে শিশুরা ধর্মীয় নুরানি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এব্যাপারে সিলেট মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান বলেন, আগেকার দিনে পাড়া-মহল্লায় মসজিদে মসজিদে মক্তবে সকালবেলা পড়া শুনা যেত কিন্তু এখন তা নেই বলে চলে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে অভিভাবকদের মাঝে দায়িত্বের অভাব । আমরা বাংলা আর ইংলিশকে বেশি গুরুত্ব দেই। কিন্তু মক্তবে পড়া বা নুরানি শিক্ষার প্রতি আমরা তেমন একটা আগ্রহ দেখাই না। মক্তবগুলোতে আগের মতো করে পড়াশুরু করার জন্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, সকাল কিংবা বিকাল যেকোনো সময় শিশুদের মক্তবে পড়ার একটা ব্যবস্থা করা অতি জরুরি। তা না হলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা নুরানি শিক্ষা দূরে সরে যাবে।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে সিলেট মহানগর জাতীয় ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবকিছুর মধ্যে জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন । ঠিক তেমনি মক্তবে পড়ানোর ক্ষেত্রেও জবাবদিহিতা থাকা উচিত। আমরা নিজ নিজ এলাকার দায়িত্ববান অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ প্রভাতি মক্তবগুলো জমজমাট রাখার ব্যবস্থা করি। আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলি আফসোসহীন বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতকারী হিসেবে। আর নূরানি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে এ মক্তবগুলো পরিচালনার উদ্যোগ নিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *