
পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন এর ক্ষতি এবং পরিত্রাণ।
আমার ফুফাতো ভাই একবার শহর থেকে গ্রামে ঘুরতে আসলেন।কয়েকদিন ঘুরাঘুরির পর গ্রামের বাচ্চা কাচ্চাদের ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন হলেন,তিনি জানালেন এদের ম্যানার বলতে কিছু নেই।ঠিকঠাক মতো কথা বলতে জানেনা,মুখের ভাষা অনিয়ন্ত্রিত,আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে যাদের লেশমাত্র ধারণা নেই।আমি প্রতিউত্তরে কিছু না বলে চুপচাপ শুনে যাই।
গেলো বর্ষায় এক ক্যান্সার আক্রান্ত বন্ধুকে রক্ত দিতে গ্রাম থেকে শহরে যাই।রাত গভীর হওয়ার দরুন আমাকে শহরেই থেকে যেতে হয়,গন্তব্যস্থল হয় একমাত্র ফুফাতো ভাইয়ের বাসা।ফুফু এবং ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে মুনতাসিরের আবদারে এক রাতের বদলে সেখানে দু-রাত থাকতে হয়।মুনতাসির খুব চৌকস এবং মায়াবী ছেলে,যে কাউকে মায়ার জালে আটকাতে পারে।পড়া লেখার বিষয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে জানতে পারি সে ক্লাস সেভেনে পড়ে।সবকিছুতে বেশ পটু হলেও গণিতে খানিক দুর্বল।কীভাবে ইউটিউবে ভালো টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়,যাতে খুব সহজে পাঠ্যবইয়ের অংক গুলোর সহজ সমাধান পাওয়া সম্ভব এ মর্মে তার ট্যাবটি হাতে নেই।হাতে নিয়ে চমকে উঠি,গ্যালারি ভরতি অশালীন ছবি,নীল জগতের নিষিদ্ধ ভিডিও,সার্চ ইঞ্জিনের হিস্ট্রি যেন ডার্ক ওয়ার্ল্ডের গোডাউন।পিচ্ছি ছেলের কর্মকান্ড দেখে আমি হতবাক,কথা না বলে মাথা নীচু করে বসে থাকি,সে আস্তে করে আমার সামনে থেকে উঠে যায়।
পরেরদিন ফেরার পথে কাজিনের হাতে একটি চিরকুট দিয়ে আসি,লেখাটি ছিলো এমন, “অযত্ন,অবহেলা এবং আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়ায় আপনার ছেলে হয়ে উঠছে অনিয়ন্ত্রিত পারমানবিক বোম,ছেলেকে সভ্যতার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন”।
তার বহুদিন পর কাজিনের সাথে আবার দেখা হলে তিনি আমাকে ” ধন্যবাদ” জ্ঞাপন করেন।
সন্তানের সফলতার জন্য বাবা-মা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন,তবে শিক্ষার প্রতিযোগিতায় সন্তানেরা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত।আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আমরা নৈতিক শিক্ষা,সামাজিক মূল্যবোধ,ইসলামিক নীতি থেকে বহুদূরে।তাই সমাজে আজ এতো বিশৃঙ্খলা,হতাশা,আত্মহত্যার প্রবণতা,অন্ধকার পথে যাত্রা,হাজার হাজার সমস্যা।এই শিকলে বন্ধি শিশু,যুবক,বৃদ্ধ,কেউই রেহাই নেই।তবে এই নৈরাজ্যের বিস্তার তরুণ প্রজন্মকে কুঁকড়ে খাচ্ছে খুব,তাই আজ যুব সমাজ দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে ডুব।
একটি চারা গাছের যত্ন নিতে হয়,খুঁটি দিয়ে সোজা করে দাঁড় না করালে এটি বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।ঠিক তেমনি সন্তানের ক্ষেত্রে কৈশোরের যত্ন নিতে হয়।বাবা-মা হাতে ধরে সঠিক পথ দেখালে নিশ্চয়ই সেই কিশোর আলো দেখে যৌবন বার্ধক্য সঠিক পথে পরিচালিত করে।
সময়ের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে তরুণ প্রজন্ম আজ দিশেহারা।একচেটিয়া সমাজ ব্যবস্থায় সভ্যতার আবরণ ভেঙ্গে পড়ে বিশ্বমঞ্চে আজ অশ্লীলতার সয়লাব।পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন দুই সহোদর ভাই ধ্বংস করছে শক্তি,সামর্থ্য ও বেঁচে থাকার আপাদমস্তক স্বপ্ন।
একজন ফল ব্যবসায়ী পাঁচ টাকা বেশি লাভের জন্য ফরমালিনের মত বিষবৃক্ষ ছিটিয়ে দিয়ে মানুষের পুষ্টি যোগায়,আর নিজেকে পুষ্টিদাতা হিসেবে জাহির করে।অপরদিকে আধুনিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতি পর্নগ্রাফির মত অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং মাস্টারবেশনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে বলছে এগুলো মানসিক এবং শারীরিক ভাবে উপকারী।কিছু স্বার্থন্বেষী লোকের জন্য বিশ্বের লাখো মানুষ আজ ভুল পথে বহমান।
হস্তমৈথুন হচ্ছে বিকৃত যৌনাচার,আর পর্নোগ্রাফি অশ্লীলতার এক বিশাল সমাচার।আইটেম সং,অশ্লীল সিনেমা,ভারতীয় সিরিয়ালসহ নষ্টামিতে ভরপুর সিনেমাগ্রাফি পরিবারের সবাই একসাথে বসে দেখতে লজ্জা করেনা,অথচ যে বিষয়টির জন্য সুন্দর সমাজ আজ ধ্বংসের দিকে,সেটি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের যত লজ্জা,অস্বস্তি,অপূর্ণতা।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস এক ভয়ংকর ব্যাধির নাম,তারচেয়েও ভয়ংকর ব্যাধি এবং নীরব মহামারি হচ্ছে মাস্টারবেশন ও পর্নোগ্রাফি।একসময় শুধুমাত্র যুবকদল এই আসক্তিতে ভুগলেও আজকাল যুবতীরা এ নিয়ে অনেক বেশি শংকায় ভুগছে।রেসলিং যেমন সাজানো,পর্নভিডিও ঠিক তেমন সাজানো নাটক বৈকি কিছুই নয়।অথচ মানুষ বানানো বিষয়কে বাস্তব মনে করে নিজের উপর তা চালনা করতে চায়।দিনশেষে অসুখী হয়,পরিবারে ফাটল ধরে।যুবারা প্রথমে নীলদুনিয়ার নিষিদ্ধ ভিডিও দেখে,পরে হস্তমৈথুন করে,অতঃপর হতাশায় ভোগে আর ভাবে জীবনে এই পাপ আর করবনা।অথচ নিজের সাথে দেওয়া ওয়াদা আবার খেলাফ করে,আবার ভুল কর্মে জড়িয়ে পড়ে।
কাউকে যদি একটা হাসির জোকস শুনাই,সে হাসবে।তারপর যদি সেটা আবার শুনাই হয়তো একটু কম হাসবে,তারপর যদি একই জোকস আবার শুনাই তাহলে সে বিরক্ত হবে।যা তার জন্য হাসির কারণ ছিলো,সেটাই হয়ে উঠে বিরক্তির কারণ।একজন মানুষ একই ধরনের ভিডিও বারবার দেখার পর তার মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসে,তারপর সে ভিন্ন কিছু দেখার চেষ্টা করে।ওরাল/এনাল সেক্স,সমকামিতা,শিশু ধর্ষণ,এমনকি অজাচারের(incest) মত খারাপ ভিডিও গুলো দেখতে এক সেকেন্ডও ভাবেনা।অতঃপর তারা এগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে চায়।তাই সমাজে বোনের কাছে ভাই হচ্ছে আতংকের,মেয়ের কাছে বাবা অনিরাপদ,রাস্তাঘাটে নারীরা ধর্ষিত,লিখা হচ্ছে মা ও ছেলেকে নিয়ে চটিগল্প।কথাগুলো বিদঘুটে দেখালেও এটাই বাস্তব চরম সত্য।
গবেষণায় দেখা যায়,ধর্ষণের ভিডিয়ের রিচ সংখ্যা বেশি।একজন ৩৫ বছরের যুবক একটা ৮/১০ বছরের মেয়েকে র্যাপ করছে।সেটা দেখে আপনি মজা পাচ্ছেন, নিজের খায়েশ মেটাচ্ছেন।আপনার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে নাই?ধরেন আপনার একমাত্র বোনের বয়স ৯ বছর।স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু পিশাচ ধরে নিয়ে গেল,ধর্ষণ করলো ইচ্ছেমত,সাথে ভিডিও করে কোনো এক ওয়েবসাইটে ছেড়ে দিলো।অন্য মানুষ এই ভিডিও দেখে মজা পেল।তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে?যারা মজা পাচ্ছে তাদেরকে পশু বলবেন?নাকি সাধুবাদ জানাবেন?নোংরা লাগে কথা গুলো তাইনা ভাই?রাগ হয় খুব?তাহলে আমরাও কারো না কারো বোনের,মায়ের,মেয়ের ধর্ষণের ভিডিও দেখে নিজেকে চরম পর্যায়ে পৌছাচ্ছি,তাহলে আমাদের মানসিকতা কেমন একটু ভেবে দেখেছি?
আপনি দেখছেন ব্লু ফিল্মসের মত অরুচিকর ভিডিয়ো,এতে উপকৃত হচ্ছে মিডিয়া কর্মীরা,আপনার ভিউয়ে তাদের উৎসাহ বাড়ছে,নতুন ভিডিয়ো বানাতে এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।তাদের সাথে আপনিও গোনাহের সাথে শামিল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।আমাদের মধ্যে নূন্যতম লজ্জাবোধটুকুও নেই,নিজেরা খারাপ কাজে জড়িত সাথে নিজের বন্ধুদের মধ্যে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দিয়ে গোনাহে জারিয়ার সাথে লিপ্ত হচ্ছি।আমরা দিন দিন এক অশুভ ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি।
চোর চুরি করে দুনিয়ায় লাভের জন্য,আর বর্তমান প্রজন্ম পর্নোগ্রাফি দেখে,হস্তমৈথুন করে কোন লাভের জন্য?ইহকাল নাকি পরকালের?
তরুণেরা যদি একবার ভাবতো নিজের ধ্বংসের কথা,উপলব্ধি করতো ভবিষ্যতের কথা,তাহলে সারাজীবন পার হয়ে গেলেও এমন ভয়ানক ও গর্হিত কাজে অংশ নিত না।
আজ গ্রামে-গঞ্জে,বাসে-লঞ্চে চারিদিকে কলিকাতা হারবাল,যৌন দুর্বলতার লাল পোস্টার লাগানো।এগুলো কিসের ইঙ্গিত করে?একজন পুরুষ কিংবা নারী দৈহিক ভাবে খুব শক্তিশালী?আজ যৌন দুর্বলতার রমরমা ব্যবসার মূল কারণ পর্নগ্রাফির ও হস্তমৈথুনের কু-প্রভাব।
মার্কিন গবেষক ড. জুডিথ রিসম্যান পর্নোকে ‘ইরোটোটক্সিন’ বলে চিহ্নিত করে বলেন এগুলোতে আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে ডোপামিন, এপিনেফ্রিন, এন্ডোরফিন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চিন্তা ও আচরণের সমস্যা দেখা দেয়।
বিয়ের পর নানা ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়।পর্দার ফেইক মানুষটির মতো নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বারংবার,এতে পারিবারিক মিল বন্ধনে ঘাটতি দেখা দেয়।পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি ব্যক্তি যেকোনো উপায়ে হস্তমৈথুন করবে।যার ফলে জটিল সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে।একসময় ছেলেদের লিঙ্গ ছোট ও বাঁকা হয়ে যায়,মেয়েদের যোনিপথ বড় হয়ে বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের সৃষ্টি হয়।একটু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই পেশাবের রাস্তা ঢিলে হয়ে যায়।দ্রুত বীর্যপাত ঘটে,দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি হয়।বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে,যার ফলে একসময় এই স্পার্ম আর বাচ্চাদানে সহায়ক হয়ে উঠে না,হলেও সন্তান হয় প্রতিবন্ধী।হস্তমৈথুনের ফলে স্মৃতি শক্তি কমে যায়,হার্ট,নার্ভাস সিস্টেম,ডাইজেস্টিভ সিস্টেমসহ বিভিন্ন সিস্টেমে জটিল সমস্যা দেখা দেয়।যার ফলে চলেফেরা করতেও কষ্ট হয়।এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন,অক্সিটোসিনের মত হরমোন নিঃসরণ করে,যা আনন্দ অনুভূতি দেয়।এই হরমোনগুলো একসময় মানুষকে আর আনন্দিতকরণ করতে ব্যর্থ হয় এবং মস্তিষ্ক কোনো বিষয়ে আর আনন্দ খুঁজে পায়না,উক্ত ব্যক্তি তখন সব বিষয়ে মনমরা হয়ে থাকে,কারো সাথে কথা বলতে বিরক্তবোধ করে,আলো দেখলে ভয় পায়।পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন একজন স্টুডেন্টকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে,তা একমাত্র ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীই বুঝতে পারে।একটি সুন্দর সাজানো গোছানো জীবনকে ধ্বংস করে দিতে এর বিষবৃক্ষের ছিঁটেফোঁটাই যথেষ্ট।এই নিষিদ্ধ বিষয়গুলোতে জড়িত ব্যক্তিগুলো মানসিকভাবে এতোটাই বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে,তারা যে কাউকে খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারে।একটি খারাপ কর্ম আরো অনেকগুলো খারাপ কর্মের জন্ম দেয়,ঠিক তেমনি এগুলো আসক্ত ব্যক্তিকে একের পর এক পাপের দিকে ঠেলে দেয়।জীবনের রং,আয়োজন,প্রফুল্লতা সবকিছু বিনাশ হয়ে যায়।
আমরা এর বিশাল ভয়াবহতা জেনেও এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।আসলে আদৌও কি পরিত্রাণের চেষ্টা করেছি?করলে কতটুকুই করেছি?
এগুলো থেকে পরিত্রাণের প্রথম শর্ত হলো নিজের ইচ্ছেশক্তি।যদি নিজে থেকে পূর্ণদমে এগিয়ে না আসেন,কেউ জোরপূর্বক আপনাকে বাঁচাতে পারবেনা।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মানুষকে পরিপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন,তাই সবকিছু তার নিজের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত।এই জীবনে যা ভুল করা হয়েছে,সব ভুল-ভ্রান্তির জন্য তওবা করে আলোর পথে ফিরে আসতে হবে।সাময়িক সুখের জন্য অনন্তকালের চিরশান্তি হাতছাড়া করা নিজের পায়ে কুড়াল মারা থেকেও ভয়ংকর।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন,যারা তার কাছে বেশি বেশি তওবা করে এবং তিনি ভালোবাসেন তাদেরকে যারা নিজেকে পবিত্র রাখে”[আল বাকারা-২২২]
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে পবিত্র রাখে,নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।আপনি কি আল্লাহর পছন্দের কেউ হতে পেরেছেন?
আমাদের সুষ্ঠু চিন্তাশীলতার প্রসার ঘটাতে হবে,প্রতিদিন কি করি না করি সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।যখন প্রতিটা কর্মই হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তখন আমাদের দ্বারা খারাপ কাজ করা হয়ে পড়বে অসম্ভব।
আমাদেরকে একটি রুটিনের মধ্যে দিয়ে আসতে হবে,জীবনের আসল উদ্দেশ্যে না জানলে দুনিয়ায় অশান্তি,আর পরকালে জাহান্নামের লেলিহান অগ্নিশিখা।আমরা রুটিন লিখে সে রুটিন মানতে পারিনা,তাই আমাদেরকে দিনের শেষে প্রতিদিনের কর্ম রুটিন আকারে লিখতে হবে।রাতে ঠিক ঘুমানোর আগে দিনের যাবতীয় ভালমন্দ প্রতিটি কর্মকাণ্ড নোট আকারে প্রকাশ করতে হবে।ফেলে আসা দিনের কথা না ভেবে আগামীদিনকে কতটা সৃজনশীল করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অবশ্যই সৎ বন্ধুদের সাথে মিশতে হবে।এমন অনেক বন্ধু আছে যাদের দেখলে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ হয়,তাদের সাথে উঠাবসা করতে হবে।যাদের দেখলে মাথায় খারাপ চিন্তা ভর করে তাদের ধারে কাছে ঘেঁষা যাবেনা।কাল হাশরের ময়দানে এমন বন্ধু আপনার কোনো উপকারে আসবেনা।আলীম উলামাদের সোবহতে থাকা আবশ্যক,এতে অন্তর নূর দ্বারা পরিপূর্ণ হবে,কুচিন্তা দূর হবে।
মানুষ অন্ধকার দেখলে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে,আপনাকে আলোয় মিশতে হবে।স্রষ্টার সৃষ্টি আকাশ,গাছপালা,পাহাড়-পর্বত এগুলোর দিকে প্রশান্তির দৃষ্টিতে তাকালে আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন ঝান্ডা হাতে আলোর ফেরিওয়ালা।আপনার ভেতরের সব ক্রোধ,হিংসা,অপরাধ প্রবনতা নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে আপনি হবেন ন্যায়ের প্রতীক।
চোখ হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।অথচ এই নেয়ামতকে খারাপ কাজে লাগিয়ে আমরা জাহান্নামের টিকেট কিনছি প্রতিনিয়ত,চোখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই অনেক সমস্যার সহজ সমাধান পাওয়া যায়।যে চোখ দিয়ে আমরা পর্নগ্রাফি,অশ্লীল সিনেমা,বেগানা নারীদের দেখি সেই চোখ দিয়ে কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি?আমরা কি তা ভেবে দেখেছি একবার?ভাই ঠিকঠাক চোখের যত্ন নিলে,পরকালে জান্নাতের চাবি মিলে।
আপনাকে চ্যালেঞ্জিং জীবন গ্রহণ করতে হবে।ইলেকট্রনিক ডিভাইস মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।বিজ্ঞান অনেক সময় আর্শীবাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।সবকিছুর ভালো খারাপ দিক আছে,আমরা শুধু খারাপটাই গ্রহণ করি।এই মিডিয়া জগৎ,মোবাইল,কম্পিউটার এগুলো থেকে দূরে গিয়ে একান্ত নিজেকে সময় দিতে হবে।প্রয়োজনে ভালো ইসলামিক বইয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।কুরআন হাদীস সম্পর্কে সুক্ষ জ্ঞান থাকা প্রতিটি মুমিনের ফরজ দায়িত্ব।
আমরা যখন ভালো কাজ করি তখন মনে হয় আল্লাহ আমাদের খুব কাছে,আর যখন খারাপ কাজ করি তখন ভাবি আল্লাহ দূরে।অথচ আল্লাহ সবকিছুই দেখেন।আমরা মূলত মানুষকে ভয় পাই,মানুষ লুকাই।প্রতিবেশীকে লুকিয়ে যতই যাই করি,কোনো কিছুই আল্লাহর অগোচরে নয়।গর্তের পিপীলিকার খবরও আল্লাহ তা’লা জানেন।এই যে ঘরের কোণে অন্ধকার রুমে লুকিয়ে যে খারাপ কাজে অংশ নিই,আমরা কি সৃষ্টিকর্তাকে লুকাতে পেরেছি?
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে;এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত”(আন-নূর-৩০.)
একজন মৃত্যু পদযাত্রী কখনো খারাপ কাজে শামিল হতে চায় না,অথচ আমাদের মৃত্যু দুই চোয়ালের চেয়েও নিকটবর্তী।বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করলে কেউ অশ্লীলতায় জড়াতে পারেনা।
কত মানুষ দেখেছি যাদের ছিলোনা কোনো রোগ,
হুট করে আত্মাটা চলে গেল দিলোনা সুযোগ।
[ইমাম বুখারি (রহ.)]
ধরেন আপনি মাত্র অশ্লীল ভিডিও দেখে হস্তমৈথুন করে ওয়াশরুম থেকে বাহির হয়ে দেখলেন আপনার অতি প্রিয় (বাবা/মা) কেউ মারা গেছেন,তখন আপনার অনুভূতি কি হবে?নাপাক শরীর নিয়ে তাদের মুখ দেখতে যাবেন?দুনিয়া সম্পর্কে অনেক কিছু চিন্তা করেন,এইগুলো সম্পর্কেও আপনাকে ভাবতে হবে ভাই।এগুলো অস্বাভাবিক নয়,যেকারো সাথে হতেই পারে।
আমার পক্ষ হতে যখন কোন ছোট/বড় খারাপ কাজ সংঘটিত হতো,আমার বড় ভাই আমাকে ডেকে বুঝাতেন।বলতেন দেখ ভাই,আমরা যদি ভালো কাজ করি এর উত্তম বদলা হিসেবে আল্লাহ আমাদের বাবা-মাকেও একটা অংশ দিবেন।ঠিক তেমনি খারাপ কাজ করলে গুনাহের একটা অংশ আমাদের বাবা মায়ের কপালে বর্তাবে।আমরা আমাদের বাবা মাকে ভালোবাসি তাইনা?এখন ভাব আমরা তাদেরকে জান্নাত না জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছি?ও আমার ভাই,কথাগুলো কি তোর হৃদয়ে জাগ্রত হয়না?
তাঁর কথা শুনে নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হতো,বাবা মা যখন অসুস্থ হোন তখন মনে মনে ভাবতাম এগুলো হয়তো আমার পাপ কাজের জন্য হচ্ছে।তখন ওয়াদা করি আর কোনো ধরনের অসংগতিপূর্ণ কাজ করা যাবেনা।এমন করে প্রত্যেক যুবক ভাইবোনদের ভাবতে হবে।
আপনার পর্ন দেখার এবং হস্তমৈথুনের খুব বেশি খায়েশ উঠেছে,এটাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।এমতাবস্থায় যদি আপনাকে ইসলামিক মাইন্ডেড বন্ধুর নছীহত শুনানো হয়,তাতেও কাজ হবেনা।তবে ঠিক ঐ মুহূর্তে আপনার নিকট খারাপ কোন দুঃসংবাদ আসলো,আপনার এক মাত্র ভাইটি হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে আছে।দম যাবে যাবে এমন অবস্থা,তখন আপনার মনের অবস্থা কি হবে?হস্তমৈথুন করার নেশা তখনও মাথায় ঘুরপাক খাবে?নাকি তাড়াতাড়ি মেডিকেলের দিকে রওয়ানা হবেন?উত্তর যদি না হয়,তাহলে আপনি এটাকে কীভাবে কন্ট্রোল করলেন?মানুষ চেষ্টা করে অথচ পারেনা এমন কিছু পৃথিবীতে নেই।শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিবে,কিন্তু মানুষ হিসেবে আপনার বাহ্যিক এবং মানসিক শক্তি শয়তান থেকে হাজারগুণ বেশি এটা ভুলে গেলে চলবে?
সমাজের চোখে কত ন্যায় সৎ নিষ্ঠাবান লোক কাল কেয়ামতের দিন আটকা পড়বে,তাদের কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা।রাসূল (সঃ) বলেন কিয়ামতের দিন অনেকেই তিহমার শুভ্র পর্বতমালার মতো আমলনামা নিয়ে উপস্থিত হবে,অতঃপর আল্লাহ তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দিবেন।কারণ তারা অনেক ইবাদত বন্দেগী করলেও গোপনে হারাম কাজে লিপ্ত হতো[সুনানে ইবনে মাজাহ-৪/৪২৪৫]।এবার ভেবে দেখুন পর্নোগ্রাফি ও হস্তমৈথুনের মতো অশ্লীল সব কর্মকাণ্ড আমরা গোপনেই করছি।কাল হাশরের ময়দানে আমাদের কোন আমলই গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা।তখন আমাদের অবস্থা কি হবে ভাইবোনেরা?
আবার অনেকে স্বপ্নদোষের ভয়ে হস্তমৈথুন করে,এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা ছাড়া কিছুই নয়।স্বপ্নদোষ একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।Nocturnal Emission is the sign of purity.এটি প্রমাণ করে একজন যুবক কতটা স্বচ্ছ,কতটা প্রাণবন্ত,কতটা আদর্শবান।
কথায় আছে,যত ব্যস্ততা তত সুস্থতা।একজন ব্যস্ত মানুষ এমন অনৈতিক কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারেনা।আর অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।নিজেকে সবসময় ভালো কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে,নাহয় শয়তান আপনার মস্তিষ্কের বুদ্ধিবল খেয়ে খুব সহজেই অপরাধে নিপতিত করবে।যথাসম্ভব কাজে লেগে পড়ুন,বাবা-মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করুন,শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন,বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হোন(অবশ্য নারী/পুরুষ আলাদা সংগঠন হতে হবে),পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করুন,হারাম সম্পর্ক পরিত্যাগ করুন,মিউজিক শোনা একদম অফ করে দিন।পাবজি,ফ্রি ফায়ারের মত ফিতনবাজ গেইম বাদ দিয়ে সাঁতার কাটুন,দৌড় ঝাপ করুন,শালীন পোষাক পড়ে ক্রিকেট,ফুটবল খেলুন।দেখবেন পর্নগ্রাফি ও হস্তমৈথুন আপনার নিকট কতটা ঘৃণিত হয়ে ওঠে।
নিজে বিয়ে করুন,অন্যকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করুন।একদল আদর্শবান স্বামী-স্ত্রী খুব সহজে শয়তান দ্বারা প্রভাবিত হয়না।হস্তমৈথুন এবং পর্নগ্রাফির মত গর্হিত কাজ থেকে রক্ষা পেতে বিবাহ অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।
নবী রাসূল,সাহাবী,তাবেঈন ও সালাফগণের জীবনী সম্পর্কে জানতে হবে।একটি সুন্দর জীবনী একজন মানুষের অসুখের মেডিসিন।নিশ্চয়ই এগুলো আপনার পথচলাকে সুগম,মসৃণ ও ধারালো করবে।
শিখার জন্য ভ্রমণ তো অনেক করলেন,মাঝেমধ্যে একা একা গোরস্তানের পাশে গিয়ে বসবেন,ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কল্পনায় একবার নিজেকে কবরে শোয়াবেন।অশ্লীল দৃশ্য,বেগানা নারী দেখে আর হস্তমৈথুন করে বেলাশেষে আপনাকে ঐ কবরেই যেতে হবে।তখন কি হবে?এই পৃথিবীতে আমি কবরের চেয়ে শিক্ষনীয় স্পট আর দ্বিতীয়টা দেখিনি।
নামাজ যাবতীয় অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে।তবে কোন নামাজ?চক্ষু শীতলকারী নামাজ।নামাজে দাঁড়ালে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায়,আর আপনার চোখে তো ঐ অশ্লীল দৃশ্য ভেসে উঠবে।আপনার নামাজ মহান র’বের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটা আপনিই বলুন?
দুআর বিকল্প নেই।আল্লাহর কাছে নীল লোহিতকরণ থেকে উত্তরণের জন্য বেশি করে চাইতে হবে।মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠুন,ওযু করে জায়নামাজে দাঁড়ান,হেদায়েতের জন্য আপনার এক ফোটা চোখের জলই যথেষ্ট।কুরআন পাকে আল্লাহ বলেন,”বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”(আয-যুমার-৫৩)
ঘর থেকে বাহির হোন,মুক্ত পাখির মতো নিশ্বাস নিন।এই পৃথিবীর সবকিছু স্রষ্টা আপনার জন্য সৃষ্টি করেছেন।আকাশের দিকে তাকান।এই সাদা মেঘ,ঝুমঝুম বৃষ্টি,উড়ে যাওয়া বক,সবুজ মাঠ,রাতের তারা,বাঁকা চাঁদ সবকিছু আপনার জন্যই।অন্ধকারে বসে তিলে তিলে আর কত নিঃশেষ করবেন নিজেকে?এবার তবে খাঁটি তওবা করে ফিরে আসা হোক নীড়ে।উত্তপ্ত মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট ফিরে পেয়ে মালিক যেমন খুশি হয়,তওবা করলে তার চেয়েও বেশি খুশি হোন আমাদের স্রষ্টা,রাব্বে কারীম,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা।
আল্লাহকে ভয় করুন,আল্লাহর উপরই ভরসা করুন।”যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট”[আত ত্বালাক-৩]
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খান